বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০১:২৩ অপরাহ্ন

জীবন্ত টেলিফোন গাইড জন্মান্ধ মিজান

জীবন্ত টেলিফোন গাইড জন্মান্ধ মিজান

স্বদেশ ডেস্ক:

নাম মিজানুর রহমান। জন্ম থেকে তার দু’চোখ অন্ধ। বর্তমান বয়স ২৫ বছর। কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের প্রত্যান্ত অঞ্চল টাঙ্গারিপাড়া গ্রামে তার জন্ম। মিজানুরের বাবার নাম মোনতাজ আলী ও মায়ের নাম মোমেনা খাতুন। দুই ভাই-বোনের মধ্যে সে বড়।

জন্মান্ধ মিজানুর রহমান মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড, বিকাশে টাকা লেনদেন করাসহ প্রায় ৫ হাজার মোবাইল ফোন নম্বর মুখস্থ বলতে পারে। ওই এলাকার অধিকাংশ লোকজন জন্মান্ধ মিজানুরের কাছ থেকে টাকা ফ্লেক্সিলোড করে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে ওই এলাকার পরিচিত সকল মানুষের মোবাইল নম্বর তার মুখস্থ। ফ্লেক্সিলোড করতে গেলে নম্বর না বলে ব্যক্তির নাম বললেই টাকা চলে যায় মোবাইলে ফোনে।

দারিদ্র্য পরিবারে জন্ম নেয়ায় ইচ্ছা থাকার পরেও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেনি মিজানুর। বাধ্য হয়ে টাকা উপার্জনের পথে নামে। শুরুর দিকে তাকে নানা অবহেলার শিকার হতে হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেধা ও স্বরণশক্তি দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেন তিনি। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফ্লেক্সিলোড করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগে অন্ধ মিজানের। দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করলেও কখনো ভুল করেনি। মোবাইল নম্বর তার লিখে রাখার প্রয়োজন হয় না। পুরো দিনের হিসাবও মুখস্থ থাকে তার।

চোখে না দেখে মোবাইল ফোনে টাকা লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, কোন বাটুনে কোন সংখ্যা এটা মোবাইল সেটের উপর হাত রেখে বলে দিতে পারি। ব্যবহার করতে করতে আমার সব জানা হয়ে গেছে। ফ্লেক্সিলোড করার ক্ষেত্রে মোবাইলে কোন বাটুন টিপতে হবে, কোন অপশনে যেতে হবে সেটাও আমার জানা হয়ে গেছে। বিকাশে (ব্র্যাক ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং) বা রকেটে (ডাচবাংলা মোবাইল ব্যাংকিং) টাকা পাঠাতে কোন সমস্যা নেই। শুধু ইনকামিংয়ের ক্ষেত্রে আমাকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির হটলাইনে কথা বলে নিশ্চিত অথবা অন্য কারো সহযোগিতা নিতে হয়।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মানবতার মা শেখ হাসিনার কাছে আমার আকুল আবেদন আমার অন্ধ দুই চোখের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করলে আমি পৃথিবীর আলো দেখতে পাবো। অর্থ উপার্জন করে বৃদ্ধ মা-বাবাকে ভরণপোষনে সহযোগিতা করতে পারবো।

মিজানের বাবা মোনতাজ আলী বলেন, সে জন্ম থেকেই অন্ধ। চিকিৎসার জন্য তাকে উলিপুর, রংপুর ও দিনাজপুর চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গেছি। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার চোখের অপারেশন করতে চেয়েছিল, কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে মিজানের অপারেশন করা সম্ভব হয়নি। তিনি অভিযোগ করে বলেন মেম্বার ও চেয়ারম্যানের কাছে কয়েকবার গিয়েছিলাম তারা আমার ছেলেটাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন সাহায্য করেনি। বর্তমানে সে টাকা উপার্জন করে পরিবারকে সাহায্য করছে।

বন্দবেড় ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান কবীর হোসেন জানান, এ বিষয়ে আমি জানিনা, তবে খোঁজ-খবর নিয়ে আমার পরিষদ থেকে যতটুকু সাহায্য সহযোগিতা করার দরকার আমি তা করবো।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, মিজানুর জন্মন্ধ, তাকে প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে।

উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আকতার স্মৃতি বলেন, অন্ধ মিজানুরের বিষয় নিয়ে আমার কাছে কেউ আসেনি। সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা পেলে অবশ্যই তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877